ফ্রান্সে সর্ববৃহৎ মুসলিম স্কুলে সরকারি অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত

প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও প্রশ্নমূলক শিক্ষাদান পদ্ধতির অভিযোগ এনে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় মুসলিম স্কুলে অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। সোমবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে ফ্রান্সের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর বিস্তৃত দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০০৩ সালে দেশটিতে ‘প্রাইভেট স্কুল অ্যাভেরোয়েস’ নামের এই মুসলিম স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের লিলে শহরে প্রথম মুসলিম স্কুলটির অবস্থান। আট শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছিল। ২০০৮ সাল থেকে ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় আসে বিদ্যালয়টি। সেসময় থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ফ্রান্সের নিয়মিত শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও দেয়া হত।

কিন্তু গত অক্টোবরে স্কুলটি নিয়ে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় দপ্তর স্কুলটির অভুন্তরীন গুরুতর প্রশাসনিক ও আর্থিক সমস্যার কথা জানায়। একই সঙ্গে ফরাসি মূল্যবোধের সাদৃশ নেই এমন কিছু শিক্ষাদান পরিচালিত হয়ে আসছে স্কুলটিতে বলেও অভিযোগের দাবি জানায় দপ্তর। 

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় দপ্তর বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি  জানিয়েছে। পরে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অনেক মুসলিম মনে করে থাকেন ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার বাস ফ্রান্সে। কিন্তু ২০১৫ সালে দেশটিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর থেকেই মুসলিমদের প্রতি সরকার বিদ্বেষী হয়ে পড়ে। 

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী দেশটির সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম নারীদের আবায়া পরা নিষিদ্ধ করেন। আর এ নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। এছাড়াও গত বছর উত্তর ফ্রান্সের এক ইমামকে নির্বাসনের আদেশও দেওয়া হয়েছিল।

অ্যাভেরোসের প্রধান শিক্ষক এরিক ডুফোর বলেছেন যে, তিনি এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় অফিস থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পাননি। তবে এমন আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান ডুফোর। 

তিনি বলেন, "যখন প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের কথা আসে, তখন আমরা অন্য যে কোনও স্কুলের চেয়ে বেশি কিছু করি।" 

ডুফোর গত সপ্তাহে লিলে রয়টার্সকে বলেন, নভেম্বরের শেষের দিকে তাকে শিক্ষা কমিটির এক বৈঠকে ডাকা হয়েছিল সেসময় থেকেই সরকারের বরাদ্দ সংক্রান্ত চুক্তিটি শেষ হতে পারে বলে আশংকা জন্মে তার মনে। 

এর আগে ২০২০ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন প্রতিবেদন নিয়ে রয়টার্স জানায়, মন্ত্রণালয় বলছে-"পর্যবেক্ষন করার মত কিছুই নেই ... (আমাদের) মনে হচ্ছে শিক্ষার অনুশীলনগুলো প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধকে সম্মান করে না"। তবে মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। 

এদিকে অনুদান বন্ধ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক ডুফোর বলেন, সরকারি তহবিল ছাড়া স্কুলটির বাজেটের চাহিদা মেটানো অসম্ভব। 

তিনি বলেন,"আমাদের প্রতিটি পরিবারকে ধরে রাখার জন্য দ্বিগুণ ফি দিতে হবে, যা ধারণারও বাইরে। অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে হয়ত এটির বিকল্প থাকবে না।" 

মোহামেদ দাউদি নামের এক অভিভাবক স্কুলটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন যে  তিনি তার ১২ বছর বয়সী ছেলের জন্য অ্যাভেরোসকে বেছে নেয়ার প্রধান কারণ ছিল এখানকার চমৎকার ফলাফল। এ সময় তিনি এবং অন্য অভিভাবকেরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় অফিসের এমন সিদ্ধান্তকে একটি অবিচার বলে মনে করেন।

সূত্র: রয়টার্স 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //